সদরঘাটের সেই চিরচেনা ব্যস্ততায় ভাঁটা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ৩০, ২০২২, ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ /
সদরঘাটের সেই চিরচেনা ব্যস্ততায় ভাঁটা

পদ্মা সেতু উদ্বোধনর পর থেকেই চিরচেনা সদরঘাটের ব্যস্ততা অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। বিকাল থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভাণ্ডারিয়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুর যাওয়ার জন্য যাত্রীদের যে ভিড় থাকত, সেটা আর নেই। যাত্রীরা এখন এসব অঞ্চলে যাওয়ার জন্য পদ্মা সেতুকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।

সদরঘাটকে কেন্দ্র করে এই এলাকা সব সময় সরগরম থাকত। স্থানীয়ভাবে অনেক ব্যবসাও গড়ে উঠেছিল। অনেক দিনমজুরের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যমে ছিল যাত্রীদের মালামাল আনা নেওয়া। খুচরা মালামাল বিক্রি করে সংসার চালাত একটি বড় অংশ। এসব ব্যবসায়ীরা কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন।

তারা মনে করছেন, তাদের দৈনন্দিন আয়ে ভাটা পড়বে। লঞ্চের কর্মচারীদের মধ্যেও নানা শঙ্কা কাজ করছে। তারা মনে করছেন, যাত্রী কমলে লঞ্চের আয় কমবে। এতে চাকরি হারানোর শঙ্কায় রযেছেন তারা।

এ অবস্থায় যাত্রী টানতে ভাড়া কমিয়েছে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। কেবিন থেকে ডেক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাড়া কমেছে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ এপ্রিল বরিশাল নৌবন্দর থেকে পাঁচটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এর মধ্যে সুন্দরবন কোম্পানির লঞ্চ ছাড়া বাকি চারটি লঞ্চের বেশির ভাগ কেবিনই খালি ছিল। ঢাকা থেকে নিয়মিত পিরোজপুর আসা যাওয়া করেন এমন একজন জানান, কম সময়ে যাওয়ার জন্য পদ্মা সেতু দিয়েই যাব।

কারণ ঢাকা থেকে পিরোজপুর যেতে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। আর বাসা থেকে সদরঘাট যেতেই আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। তাই সময় বাঁচানোর জন্য এর বিকল্পই নেই।

দক্ষিণাঞ্চল থেকে লঞ্চগুলো সকালে ঢাকার সদরঘাটে এসে ভিড়ে। লঞ্চ থেকে নেমে যাত্রীরা নিজ নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আর বিকালে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার জন্য বিকাল থেকে লঞ্চ ছাড়তে শুরু করে। এই দুই সময়ে মূলত ভিড় বেশি থাকে।

যাত্রীরা বলছেন, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয় যাত্রীদের। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন। ভোগান্তি এড়াতে পদ্মা সেতু পাড়ি যেতে যেতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলে জানান নজরুল আমিন নামে এক যাত্রী।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যাত্রীও কমে গেছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। তবে বেশি কমছে কেবিনের যাত্রী। ডেকে বসে আসা যাওয়া যাত্রী তেমন একটা কমেনি বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর কারণে সড়কপথে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ হওয়ায় ২০ শতাংশের মতো লঞ্চ যাত্রী কমতে পারে। তবে তাতে এ খাতের ব্যবসায় তেমন প্রভাব ফেলবে না ।

আবার অনেকে মনে করেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর এখন যাত্রী কিছুটা কমলেও ধীরে ধীরে আবারও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কারণ যারা সপরিবারে বাড়ি যাবেন তারা লঞ্চকেই বেছেই নেবেন।

কারণ কম টাকায় তারা বাড়ি যেতে পারবেন। আর লঞ্চে আরাম আয়েশ করেই যাওয়া যায়। মেট্রোরেল যখন সদরঘাট পর্যন্ত আসা যাওয়া করবে তখন লঞ্চের যাত্রী আরো বাড়বে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

বর্তমানে সারা দেশে মোট ১০৭টি নৌপথ রয়েছে, যার মধ্যে ৪৩টি পথ ঢাকার সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের সংযোগকারী। এই ৪৩টি নৌ-রুটে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা প্রায় ২০০। আর শিমুলিয়া থেকে মাঝিরকান্দি ও বাংলাবাজারে চলাচল করে ৮৭টি লঞ্চ।

%d bloggers like this: