টিএভিআই আসলে কী?
টিএভিআই (Trans-catheter aortic valve implantation) বা TAVR (Trans-catheter aortic valve replacement ) হলো কোনোপ্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াই হার্টের এওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপনের একটি নিরাপদ, মিনিমালী ইনভ্যাসিভ ও আধুনিকতম চিকিৎসা পদ্ধতি।
চিকিৎসকরা বলছেন, বয়সজনিত ক্ষয় বা বাতজ্বরের কারণে এওর্টিক ভাল্ব সংকীর্ণ হয়ে পড়লে ভাল্ব প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষত যে সকল রোগীর ইতোপূর্বে হার্টের অপারেশন, যেমন: বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে, বয়োবৃদ্ধ রোগী যাদের অপারেশন পরবর্তী প্রত্যাশিত আয়ু এক বছরের বেশি কিংবা পারিপার্শ্বিক অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্য যাদের ভাল্ব অপারেশনজনিত মৃত্যঝুঁকি অনেক বেশি, তাদের ক্ষেত্রে বুক কেটে ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে ভাল্ব প্রতিস্থাপন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব রোগীর জন্য টিএভিআই হতে পারে একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সমাধান।
তারা বলছেন, মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাবিশ্বেই এই ধরণের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত বিশ্বে টিএভিআইয়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র পাওয়া তথ্যমতে, ২০০২ সালে সর্বপ্রথম পায়ের শিরার মাধ্যমে টিএভিআই করা হয়। এর পরের এক দশকেই পৃথিবীতে প্রায় ৬০ হাজার টিএভিআই করা হয়। সেই পথ ধরে সম্প্রতি বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে এই অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও আবাসিক সার্জন ডা. আশরাফুল হক সিয়াম ও অধ্যাপক মীর জামালউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি টিম রোগীর পায়ের ধমনীর (femoral artery) ভেতর দিয়ে এওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেন।
এই রোগী ডায়াবেটিস, কিডনী রোগ ও severe aortic stenosis এ ভুগছিলেন এবং এবং ইতিপূর্বে হার্টের রক্তনালীর ব্লকের কারণে তার বাইপাস সার্জারি করা হয়েছিল। যার কারণে পুনরায় বুক কেটে ওপেন হার্ট সার্জারী করা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে রোগী সুস্থ আছেন এবং কয়েকদিনের মাঝেই তাঁকে বাড়ি পাঠানো যাবে বলে চিকিৎসকরা আশাবাদী।
এর আগেও ডা. সিয়াম মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারীর মাধ্যমে (ফুটো করে) বাংলাদেশে ১ম ডাবল ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেন। ডা. আশরাফুল হক সিয়াম ২০১৯ সালে সরকারী হাসপাতালে বাংলাদেশে প্রথম ফুটো করে হার্টের অপারেশন শুরু করেন।
ডা. সিয়াম বলেন, এই পদ্ধতিতে রোগীর বুক না কেটে এবং অজ্ঞান না করেই এওর্টিক ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়, যা একই সাথে চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য যে কোন দেশ তো বটেই, এমনকি বাংলাদেশের যে কোন বেসরকারি হাসপাতালে যে খরচ হয়, তা যে কারো জন্যেই সাধ্যাতীত তো বটেই অনেকের ক্ষেত্রেই কল্পনাতীত। সেই দুঃসাধ্যই অর্ধেকেরও কম খরচে এবার সম্পন্ন হলো আমার নেতৃত্বে। আমার ওপর এতো বড় আস্থা রাখবার জন্য আমি আমার রোগীর কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। কৃতজ্ঞ আমার হাসপাতালের পরিচালক এবং এই টিমে অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি, যাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ
ছাড়া আমার পক্ষে তা করা কষ্টসাধ্য ছিল। ইনশাআল্লাহ এর ধারাবাহিকতা আমরা বজায় রাখবো।
তিনি আরও বলেন, রোগী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে আমার আজন্ম স্বপ্ন, হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের কোনো মানুষ আর বিদেশগামী হবে না। এদেশেই সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে। সময় ও শ্রম বাঁচবে, হবে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়। ইনশাআল্লাহ, সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন অল্প খরচে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা পেতে বিদেশিরা ভিড় করবে আমাদের হাসপাতালগুলোয়।
আপনার মতামত লিখুন :