ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা বা যশোর সীমানা পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে যাচ্ছে স্বর্ণের চালান। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিমানযোগে আসা এসব স্বর্ণ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে প্রায়ই ধরা পড়লেও পাচার হওয়া এসব স্বর্ণের সিংহভাগই খুলনা হয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর লবণচরা থানা পুলিশ প্রায় পৌণে দুই কেজি ওজনের ১৫ পিস স্বর্ণের বারসহ দুই পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, এর আগেও ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে স্বর্ণ পাচার করেছে তারা।
কেএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া বাসযোগে আগত খানজাহান আলী (রূপসা) সেতু হয়ে জিরো পয়েন্টগামী মহাসড়কে জিরো পয়েন্ট মোড়স্থ আরাফাত ড্রাগ হাউজের সামনে থেকে শনিবার বিশেষ অভিযান চালিয়ে এক কেজি ৭৫০ গ্রাম স্বর্ণের বারসহ দুইজন চোরকারবারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চট্টগ্রামের রাউজান থানাধীন পশ্চিম রাউজান মোহাম্মদপুরের বিটু বড়ুয়ার পুত্র ইমন বড়ুয়া (২২) ও তার সহযোগী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসার মোল্লা বাড়ি এলাকার আবুল কাশেম মোল্লার ছেলে আবুল হোসেন (৩৮)।
গ্রেপ্তার ইমন বড়ুয়ার পরিহিত ডান পায়ের জুতার (কেট্সে) সুকতলার নিচে রাখা সাদা স্কচ টেপে মোড়ানো ৮ পিস স্বর্ণের বার এবং বাম পায়ের জুতার সুকতলার নিচ থেকে ৭ পিস স্বর্ণের বারসহ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামির নিকট থেকে উদ্ধারকৃত মোট ১৫ পিস স্বর্ণের বার যার সর্বমোট ওজন এক কেজি ৭৫০ গ্রাম। এর আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তার সহযোগী আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে লবণচরা থানায় মামলা হয়েছে।
কেএমপি’র ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইমন ও আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, পূর্বেও ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে যশোর বা সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে স্বর্ণ পাচার করেছে। এদের পেছনে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার কতিপয় ব্যবসায়ী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণের বার বিমানযোগে এনে প্রথমে ঢাকায় গোপন আস্তানায় রাখে। সেখান থেকে পাচার করে দেশের বাইরে।
আর এ পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত ঢাকা-খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা বা যশোর সীমান্ত দিয়ে ওইসব স্বর্ণের বার সাতক্ষীরা ও যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হয়। মাঝে মধ্যে দু’একটি চালান ভোমরা ও বেনাপোল বর্ডারে ধরা পড়ে। তবে বেশির ভাগ চালান পাচার হয়ে যায় বলে সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ এবং দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামের আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকায় এক শ্রেণির চোরাকারবারি এ ব্যবসায় জড়িয়েছে।
স্বর্ণ চোরাচালান সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্য জানান, এগুলো যখন ঢাকা থেকে আনা হয় তখন কীভাবে কোথায় রাখা হয় তা পুলিশসহ কোনো সংস্থাই সহজে ধরতে পারবে না। এক কেজি স্বর্ণকে এক গাড়ি বলে ওদের সংকেত থাকে উল্লেখ করে সূত্রগুলো জানায়, এ সংক্রান্ত মোবাইলে কথোপকথনের সময় গাড়ি উল্লেখ করায় মোবাইল ট্র্যাকিং বা অন্য কোনো উপায়েও ধরা কঠিন। যে কারণে দিনের পর দিন তারা এ অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ইউনিক সব শব্দ কোড বা সংকেত হিসেবে ব্যবহার করে চোরচালানীরা।
আপনার মতামত লিখুন :