মনিরের ‘গল্প’ ও ‘কবিতা’
Sarsa Barta
প্রকাশের সময় : মার্চ ৩, ২০২৩, ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ /
০
নীড়হারা পাখি নীড়ের সন্ধানে
মণিরুজ্জামান(মণির)
পড়ন্ত বিকাল,সূর্য গন্তব্যর পথধরে এগিয়ে যায় চুপিচুপি দু’ডানায় সময় কাটতে কাটতে পশ্চিমের আকাশে ঢুলতে ঢুলতে।এখুনি সন্ধ্যা নামবে পটে;পাখিরা নীড়ে ফিরে আসছে।ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরগুলোতে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে দিতেই;দূরহতে মনে হয় কোন এক অজানা দ্বীপের মাঝে জোনাকির সজ্জিত সভা।মুয়াজ্জিনের সুমধুর আজানের ধ্বনি বাতাসে মিলে যায় দূরে কোথাও।গুনগুন আওয়াজ ঝুপড়ি ঘরগুলোতে,রান্নার তোড়জোড় চলছে।বলাই,অর্জুন,রমেশ হারমনি,খোল,খঞ্জনি,নিয়ে মন্দিরের বারান্দায় বসে সদাপ্রভুর স্তবগান করছে,সাথে গ্রামের বয়স্ক কিছু মুরুব্বি শুনছে।কেউ কেউ গলা মেলাচ্ছে তাদের সাথে,হরে কৃষ্ণ,হরে কৃষ্ণ,হরে কৃষ্ণ,হরে হরে।অজিত তালে তাল মিলিয়ে দুলে দুলে গাইছে স্তবগান।
ও খুড়ো,খুড়ো(বিষু ডাকছে অজিত’কে)অজিত তখন গভীর শ্রদ্ধার সাথে প্রর্থনায় মগ্ন,আবারও বিষুর জোরালো কণ্ঠস্বর।
খুড়ো ও আজিত খুড়ো।
ধ্যান ভাংলো বোধহয় অজিতের,
হ্যা এ-ই তো।কে?
আমি বিষু।
আচমকা ‘ও বিষু,কি বলবি বল?
খুড়ো কালকে কাম কাজ আছে কিছু?
হ্যারে আছে সক্কাল সক্কাল চলে আসবি অজিত বললো।
কোন গেরামে যাতি হবে কালকেরে?
লক্ষ্মণপুর বাজারের পাশে কার্তিক খাঁর বাঢী।
ও আচ্ছা সক্কাল সক্কাল আইসা পরবো খুড়ো,এই ব’লে বিদায় নিলো বিষু।
আবারো দেবতার প্রর্থনায় মনোযোগ দিলেন অজিত।
সকালে বিষু অজিতের বাড়িতে এসে অজিতকে সাথে নিয়ে কাজের পথে রওনা হলো আজিত ও বিষু।বাজারের কাছাকাছি পৌঁছিয়ে উজ্জলের চায়ের দোকান থেকে একটু চা-রুটি খেয়ে নিলো তারা।খুড়ো আজ কোন দিকি যাবা,কার বাড়ি?দোকানদার বললো।এই তো সামনে কার্তিক খাঁর বাড়ি।
ও তালি তো আজ নিকটে,বাজারের ঐ মাথায় কাত্তিকের বাড়ি কাউকে বললেই দেখায় দিবানি বললো দোকানদার।লোকটা বড় ভালো বুঝলে খুড়ো,সম্পত্তি আছে,সন্তান শিক্ষিত, তবু তার কপালে সুখ হলো না বললো দোকানদার।একটা মাত্র ছেলে তার।মা মরা ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন,ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করা।কোন চেষ্টার খামতি রাখেনি কার্তিক খাঁ।শত প্রতিকূলতার মাঝেও ছেলের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা।হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে তবুও ছেলেকে কিছুই বুঝতে দেয় না কার্তিক খাঁ।তিন বছর বয়স যখন ছেলের,তার মা মারা যায়।পরে দ্বিতীয় বারেরমত বিবাহের পিড়িতে বসতে হয় কার্তিক খাঁর।সন্তানকে দেখাশুনা করার জন্যই মুলত দ্বিতীয় বিবাহ।ছেলে এখন চাকরি করে পাকা ঘরে থাকে আর বুড়ো মানুষটা এখনো মাটির ঘরে শুনেছি কোন খোঁজ খবরও নেই না মা বাপের।কি যুগ এলো খুড়ো।শুনেছি বউয়ের কথায় ওঠে বসে।কোন কথার উত্তর করলো না অজিত খুড়ো।বর্তমান বুড়ো মানুষটা খুব করুন অবস্থা।কোন কথার জবাব দেয় না অজিত,শুধু মাথা নাড়িয়ে সায়দেয় উজ্জলের কথায়।দোকান থেকে বেরিয়ে কাজের জায়গায় পৌছালো তারা।এক কামরা মাটির দো’চালা ঘর টালির ছাউনি;ঘরের আড়ার বাঁশে ঘুণধরা যে কোন সময় ভেঙে পড়বে চাল,মাটির ঘরটাও পশ্চিম পাশে হেলে আছে।টালি গুলান আগে নামাতে হবে বললো অজিত।বিষু চালের উপরে উঠে টালি খুলে দেয় অজিত মিস্ত্রি নিচে দাঁড়িয়ে ধরে ধরে নিচে সাজিয়ে রাখছে।দশদিন লাগলো দো’চালা মোটামুটি ঠিক করতে।অজিত বড় ভালো মানুষ,ক’দিনের মধ্যেই গ্রামের সবার মন জয় করে ফেলেছে ছেলে ছোকরা বুড়ো সবার।বুকের মধ্যে পাহাড় সমান দুঃখ বেদনা দূর্দশা হতাশা না-পাওয়ার শত শত কষ্ট জড়িয়ে নিঃসাড় জীবন পার করে অজিত।কাউকে কিছুই বুঝতে দেয় না সব সময় শত কষ্টের মাঝেও একচিলতে হাসি চিবুক জুড়ে লেগেই থাকে।এক শ্রাবণের রাত্রি আকাশে ঘনকালোকুচকুচে মেঘ,বৃষ্টি নামলো বলে।অভাবের সংসার ঘরে বসে দিন কাটানোর জো-নেই অজিতের।ঘরে তার অভাব যজ্ঞকরে নিত্যদিন,লক্ষী হতছাড়া দেখা নেই।(চলবে—)
*কবিতা-
পশ্চিমের যাত্রী
মনিরুজ্জামান মনির
তোমার বাড়ি ফুল বাসরে,আমার বাড়ি ঘ্রাণ
আমার বাড়ি শোকের মাতন,তোমার বাড়ি গান
উষ্ণজলে স্নানটি সেরে বসবে বিয়ের পিড়ি
মেহেদী পাতায় হাত রাঙিয়ে পরনে লালশাড়ি।
আমিও তখন গরমজলে স্নানটি সেরে নিচ্ছে
আতর সুরমা মাখবো,আমিও কম যায় কি?
মনের কোণে খানিকটা মেঘ হাসিটা মলিন
এইতো এলো বরযাত্রী সঙে করে পালকি।
মেহেদী রাঙা হাতটা তোমার অন্যহাতে ধরা
সংসারের পাঠশালায় নতুন ধাঁজে পড়া।
তোমার বাড়ি আত্নীয়রা হরেকরকম খাদ্যে
আমার তখন জানাজায় ভিড় লম্বালাইনে।
আমিও তখন নিচ্ছে বিদায় তোমার মত করে
আগরবাতির ঘ্রাণটা যাক তোমার বাড়ি ঘুরে।
যখন তুমি বাসর ঘরে ফুলের বিছানায়
আমি তখন গন্তব্যের পথে পশ্চিমের যাত্রী।
Like this:
Like Loading...
আপনার মতামত লিখুন :