স্বর্ণপদক জয়ী এক আফগান নারীর কথা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ১১, ২০২৩, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ /
স্বর্ণপদক জয়ী এক আফগান নারীর কথা

রাজিয়া মুরাদি, ২৭ বছর বয়সী আফগান নারী। দুই বছর থেকে তিনি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের একটি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্বে চমৎকার ফল লাভের জন্য সম্প্রতি তিনি সংবাদের শিরোনামে এসেছেন। আর পদক গ্রহণের জন্য যখন তিনি মঞ্চে ওঠেন সেই সময় তিনি অত্যন্ত আনন্দিত ছিলেন আবার একই সময় বিষাদে ডুবেছিল তার মন।

গতকাল সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

রাজিয়া মুরাদি নিজের সাফল্য উদযাপন করতে পারলেও তার পরিবার সেই আনন্দের ছোঁয়া পায়নি। মুরাদি বলেন, এটি একটি হর্ষ-বিষাদের ক্ষণ। একদিকে আমি অত্যন্ত খুশি যে, আমি আমার কঠোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছি কিন্তু একই সঙ্গে আমি আমার পরিবারের উপস্থিতির মারাত্মক অভাব বোধ করছি। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের সব কিশোরী ও নারীর কথা মনে পড়ছে যারা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব হয়েছে। আফগানিস্তানে হাইস্কুল ও বিশ^বিদ্যালয়ে নারী-শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু মুরাদি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে চলে যান। সেই সময় তার চিন্তা ছিল, দেশে ফিরে যাবেন এবং তালেবানরা কখনো ক্ষমতায় আসবে না এবং সে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু তিনি ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছিলেন কেননা সেখানে উচ্চশিক্ষায় অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এমনকি আফগানিস্তানের সঙ্গে সংস্কৃতিগত মিল থাকার কারণে ভারতকেও নিজের দেশের মতোই মনে হয়েছে।

এমন সময় মুরাদি গুজরাটের বীর নর্মদা সাউথ গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি লাভ করেন। তার কথায়- আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকেই পছন্দ করলাম কেননা এখানে অনেক আফগান শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। পরে তিনি পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে পড়া শুরু করেন। আগে থেকেই এ বিষয়ে তার আগ্রহও ছিল। মুরাদি ভাবতেন- এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা সম্ভব।

বিবিসির খবরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈর্ষণীয় ফল লাভের জন্য গত সোমবার মুরাদিকে গুজরাটের গভর্নর স্বর্ণপদক প্রদান করেন। ধারাবাহিকভাবে তার গড় স্কোর ছিল ৮.৬ যা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ।

মুরাদি জানান, তার পরীক্ষার প্রস্তুতিপর্ব মোটেও সহজ ছিল না। সেই সময় তিনি তার পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। ২০২১ সালে তালেবানরা দেশজুড়ে দখলদারিত্ব চালাচ্ছিল। যুদ্ধের হতাহতের খবর প্রতিদিন আসছিল। মুরাদি আরও বলেন, সংঘর্ষক্ষেত্রে প্রত্যেকেই বিপদে থাকেন। প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণ আর আক্রমণের খবর আসছিল। প্রতি মুহূর্তে আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তার খবর নিচ্ছিলাম কিন্তু আফগানিস্তানের দুর্বল ইন্টারনেট ব্যবস্থায় সেটি কঠিন হয়ে পড়ছিল। সেই সময় চারপাশে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

মুরাদি জানান, গত দুই বছরে তিনি তার পরিবারের কাছে যেতে পারেননি। এই মুহূর্তে তার দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়- এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স শেষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি দেশে যেতে পারছেন না। তার কথায়, এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

তালেবান শাসন সম্পর্কে মুরাদি জানান, আমি নীরব থাকলে এই শাসনব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। তালেবানরা চায় আমরা চুপ থাকি। কিন্তু একজন আফগান নারী হিসেবে তালেবান শাসনের সমালোচনা করা আমার দায়িত্ব। মুরাদি এখন গুজরাটের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি লাভের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আফগান এই শিক্ষার্থীর কথায়- আমার পরিবার এবং আমার পরিবেশ সব সময় আমার স্বপ্ন অর্জনে সহায়ক ছিলেন। এ কারণে সমাজে আমি একজন সক্রিয় নারী হতে পেরেছি। … আমার সমস্ত অর্জনের জন্য আমি তাদের কাছে ঋণী।

%d bloggers like this: