সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হট্টগোল–হাতাহাতি,বিলম্বে শুরু হয়ে প্রথম দিনের ভোট শেষ


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০২৩, ৮:১৩ অপরাহ্ণ /
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হট্টগোল–হাতাহাতি,বিলম্বে শুরু হয়ে প্রথম দিনের ভোট শেষ

অন্যদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সমিতি ভনের মিলনায়তনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গনে পুলিশের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমিতির দুদিন ব্যাপী ভোট গ্রহণের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ বেলা ১২ টা থেকে বিরতহীনভাবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে।

বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপ–কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান মনির বলেন, প্রার্থীসহ বিএনপিপন্থীদের আপত্তির কারণে ভোট গ্রহণ শুরু করতে দুই ঘণ্টা দেরি হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর ১২ টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। সমিতি প্রাঙ্গনে বিএনপিপন্থীরাই ভোটের প্যান্ডেল ভেঙেছে। এবারের নির্বাচনে ৮৬০২ জন ভোটারের মধ্যে প্রথম দিন ২২১৭ ভোট পড়েছে বলে জানান আসাদুজ্জামান মনির।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সাংবাদিকদের পেটাল পুলিশ

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সাংবাদিকদের পেটাল পুলিশ

হট্টগোল–ধাক্কাধাক্কি

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সকাল পৌনে ১০টার দিকেবিএনপি-সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত উপকমিটির একজন সদস্যের কথা-কাটাকাটি চলছিল। অন্যদিকে উপকমিটির পক্ষ থেকে বারবার প্রার্থীদের নির্ধারিত জায়গায় যেতে বলা হচ্ছিল। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা ‘ইয়েস, ইয়েস’ বলে রব তোলেন।

একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এক আইনজীবীর সঙ্গে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেল থেকে এবারের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী।

  • সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে মূলত গত সোমবার থেকে উত্তেজনা শুরু হয়। এর আগে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত’কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

কিছুক্ষণ পর বিএনপি-সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন বলেন, কমিশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। এ সময় বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা ‘ইয়েস, ইয়েস’বলে রব তোলেন। এর পক্ষে-বিপক্ষে হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ তা চলে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে মিলনায়তনে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী জানান, ভোট তখন পর্যন্ত শুরু হয়নি।

পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলা ১১টার ৪০ মিনিটের দিকে সমিতির মিলনায়তনে পুলিশ প্রবেশ করে। এ সময় কেউ কেউ লাঞ্ছিত হন।

সাংবাদিকদের পেটাল পুলিশ

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ১০ সাংবাদিক। আজ বুধবার আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এটিএন নিউজের সাংবাদিক জাবেদ আক্তারের অবস্থা গুরুতর। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

  • আহত অন্যরা হলেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস, জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলুল হক, আজকের পত্রিকার নূর মোহাম্মদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জান্নাতুল ফেরদৌস, বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরা পারসন হুমায়ুন কবির, মানবজমিনের আব্দুল্লাহ আল মারুফ।

পুলিশের হামলার শিকার সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হট্টগোলের শব্দ শুনে ভোটকেন্দ্রে যাই। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশ আইনজীবীদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করেন। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে পুলিশ আমাকে লাথি মারেন।’ তিনি আরও বলেন, সকাল ১০টা থেকে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোটকেন্দ্রে ২০ থেকে ৩০ জন পুলিশ ঢোকেন। তখন সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়।

সভাপতি একটি, সহসভাপতি দুটি, সম্পাদক একটি, কোষাধ্যক্ষ একটি, সহসম্পাদক দুটি ও সদস্যের সাতটিসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য এই নির্বাচন হয়ে থাকে। বর্তমান কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাতটি পদে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। সহসম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ অপর সাতটি পদে আছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

আহত সাংবাদিক ফজলুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ আমাকে ঘিরে ধরে পিটিয়েছে। এতে আমার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লেগেছে।’ তিনি আরও বলেন, পুলিশ বিভিন্ন সাংবাদিকদের মুঠোফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেন।

প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস বলেন, ‘হট্টগোলের ছবি তোলার সময় পুলিশ আমার পরিচয়পত্র দেখতে চান। পরিচয়পত্র দেখানোর পর সেটি ছবি তুলে রাখেন পুলিশ সদস্যরা। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা আমাকে গালাগালি দেন এবং গায়ে হাত তোলেন।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন বিষয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের লাঠিপেটা ও মারধরের বিষয়টি দুপুরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েস সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করে অবহিত করেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

পুলিশের হামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘হামলার ঘটনাটি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।’

উত্তেজনা শুরু সোমবার

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে মূলত গত সোমবার থেকে উত্তেজনা শুরু হয়। এর আগে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত’কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এই প্রেক্ষাপটে ভোট হবে কি না, কে আহ্বায়ক হবেন, নাকি উপকমিটির অপর সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন—এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলে। গতকাল সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবীর ভাষ্য, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা মো. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক মনোনীত করার পর বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা দেন। মনিরুজ্জামান নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যালট পেপারে সই করতে সমিতির তিনতলার সম্মেলনকক্ষে যান। এতে আপত্তি জানান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজ সকাল থেকেই সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ দেখা যায়।

এবারের নির্বাচন পরিচালনার জন্য আগে সমিতির বর্তমান সম্পাদক মো. আবদুন নূর (আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত) আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপকমিটি ঘোষণা করেছিলেন। অন্যদিকে কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সহসম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ (বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত) আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপকমিটি ঘোষণা করেছিলেন। তবে ২ মার্চ উভয় পক্ষের সম্মতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের (২০২৩-২০২৪) নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট উপকমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগপত্র দেন।

সভাপতি একটি, সহসভাপতি দুটি, সম্পাদক একটি, কোষাধ্যক্ষ একটি, সহসম্পাদক দুটি ও সদস্যের সাতটিসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য এই নির্বাচন হয়ে থাকে। সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাতটি পদে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। সহসম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ অপর সাতটি পদে আছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

%d bloggers like this: