দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান যে ঢাকায় পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম, সেটা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে আগেই জানানো হয়েছিল বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার পরও সাকিবের দুবাই গিয়ে আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করাটাকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আরাভ খান নামধারী রবিউল একজন খুনি। এসব কথা সাকিব আল হাসানদের অবগত করার পরও তাঁরা ‘আরাভ’ নামের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন, সেটা দুঃখজনক। তদন্তের স্বার্থে যদি প্রয়োজন মনে করি, তাহলে সাকিব, হিরো আলমদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।’
দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশির স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ওই অনুষ্ঠানে সাকিব ছাড়াও চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাসসহ বিনোদন জগতের আরও কয়েকজনকে দেখা গেছে বেসরকারি টেলিভিশনের আরটিভির প্রচারিত খবরে।
আরাভ খান নামে দুবাইয়ের এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী মূলত বাংলাদেশে পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে পুলিশ
সাকিব আল হাসান গতকাল সকালে ঢাকায় ফিরেছেন। রাতে বনানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। পুলিশ হত্যা মামলার আসামির আমন্ত্রণে দুবাই যাওয়া নিয়ে ডিবির বক্তব্যের বিষয়ে জানতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তাঁর বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন— এ রকম কয়েকটি নামে পরিচিত। ২০১৮ সালে ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের একজন পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি।
ডিবি বলছে, দেশ থেকে পালিয়ে রবিউল ইসলাম প্রথমে ভারত যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দুবাই চলে যান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী।
তবে আরাভ খান এক ফেসবুক লাইভে দাবি করেছেন, তাঁর বনানীর অফিসে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুন হলেও তিনি নিজে এই খুনে জড়িত নন।
গতকাল ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কি না, আমরা তথ্য নিচ্ছি। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব।’
দুবাইয়ের আরাভ খানই পুলিশ হত্যার আসামি রবিউল, তা কীভাবে বুঝলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা সব সময়ই তাঁর খোঁজখবর রাখছিলেন। এর মধ্যে সাকিব আল হাসানসহ অনেকের ফেসবুকে তাঁকে দেখা যায়। তিনিও ফেসবুকে অ্যাকটিভ ছিলেন।’
রবিউলকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, রবিউলের নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :